নির্যাতন, নিপীড়ন, জেল-জুলুমের শিকারদের এড়িয়ে কী বার্তা দিতে চান?
আসলে এর দায়ভার কার?
নাকি এটি আমাদের নিজস্ব প্রত্যাশা পূরণের মিশন?
আমি আসলে কখনোই নিজের চাওয়া-পাওয়া, সফলতা-ব্যর্থতা কিংবা কোনো গল্প উপস্থাপন করতে চাইনি। এটা সম্ভবত আমি যাদের সান্নিধ্যে আছি, ছোট-বড় অনেকেই জানেন।
ঢাকা কলেজের সবুজ চত্বরে সোনালি স্বপ্ন নিয়ে আমি এইচএসসিতে ভর্তি হয়ে প্রথম দিন থেকেই কলেজ ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করি, জাতীয়তাবাদী আদর্শ ধারণ করে।
সেই ওয়ান-ইলেভেনের শেষদিক থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আমি আমার সক্ষমতার সবটুকু দিয়ে দলের জন্য যতটুকু অবদান রাখা সম্ভব, তা উজাড় করে দিয়ে এসেছি এবং এখনো চালিয়ে যাচ্ছি।
ছবির রাজনীতি থেকে শুরু করে নিজের গল্প- সব কিছু অনেক সহযোদ্ধা, বড় ভাই ও ছোট ভাই জানেন।
যাই হোক, আজকের দিনে সময় ও বাস্তবতা ভিন্ন কিছু লেখার ইচ্ছা জেগেছে।
কিন্তু যখন দেখি, জুলাই বিপ্লবের সফলতার গল্প বলতে গিয়ে কিংবা নিজেকে প্রচার করতে গিয়ে অন্যদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হচ্ছে, তখন বিষয়টি নিদারুণ বেদনার জন্ম দেয়।
কিছু মানুষ আন্দোলনের সফলতাকে একেবারে এককভাবে নিজের কৃতিত্বে নিতে চাইছেন। এর ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হচ্ছে, যা কখনোই কাম্য নয়।
রাষ্ট্রের ভিত দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। কিছু লোক নিজেদেরকে উচ্চ আসনে বসিয়ে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে দুর্বল শাসন প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা করছে।
নামে-বেনামে ‘সংগঠন’ নামক দোকান খুলে তারা বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে। এটাই কি তবে ‘জুলাই বিপ্লবের’ সফলতা?
এই বিশৃঙ্খলার দায়ভার কার?
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলছে।
জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনে ছাত্রদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, সরকারি বাহিনীর দমন-পীড়নের মধ্যেও তা একটি সরকারবিরোধী সর্বদলীয় আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
তারেক রহমানের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন শ্রেণির জাতীয়তাবাদী সৈনিকদের কর্মতৎপরতা পরিচালিত হচ্ছে।
যেমন- সরকারি চাকরিচ্যুত, দেশান্তরী বা জেল খাটা বুদ্ধিজীবী, আমলা, নেতা-কর্মীদের পরামর্শ, ত্যাগ, লেখনী এবং সাহসিকতা এখনও এই আন্দোলনের ভিত্তিকে মজবুত করে রেখেছে।
শামসুল আলম ভাইয়ের মতো ব্যক্তি, যিনি ‘৩৬ জুলাই বিপ্লব’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করে আমাদের উজ্জীবিত করেন, তার মতো মানুষদের ভূমিকাকে অবহেলা করা অন্যায়।
আর আমি নিজেও, দয়াল মিজান, এই আন্দোলনের এক ক্ষুদ্র সৈনিক হিসেবে, গভীর রাতে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হই এবং অমানবিক নির্যাতনের শিকার হই।
আমার সঙ্গে থাকা সহযোদ্ধা হাবিব, আশরাফ, জামিল, ইমরান, মনির- তাদের কেউ কেউ এখনও শরীরে গুলির ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছে। এই গল্প শুধুই আমাদের, আমাদের ব্যথার।
আমার পরিবারকে আমাকে খুঁজে পেতে যে ঝড় পোহাতে হয়েছে, তার সাক্ষী শুধু আমরা।
কোর্টে তোলার আগে ও পরে, ডিবি হেফাজতে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে- শারীরিক, মানসিক উভয়ভাবেই।
ছাত্রদলের সংগঠনিক সম্পাদক মো. আমানউল্লাহ আমান ভাইসহ অনেকেই আমার বাসায় এসেছেন, কথাবার্তা বলেছেন- আমার উপর স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টাও হয়েছে। তবু আদর্শচ্যুতি ঘটাইনি।
জেল হাজতে গিয়ে ইব্রাহিম কার্দী ভাইসহ অনেকের সান্নিধ্যে সাহস পেয়েছি।
আর জেল থেকে মুক্তির পর, Mahdi Amin ভাই ইনবক্সে আমার জন্য খোঁজ নিয়েছেন, সাহস দিয়েছেন- এই ঋণ আমি কখনো ভুলব না।
তবু, এমন ভয়াবহ নির্যাতনের গল্পগুলো আজ কেউ শোনে না, কেউ শুনতে চায় না। বরং দেখা যাচ্ছে, কিছু মানুষ নিজেদের কেন্দ্র করে আন্দোলনের ইতিহাস রচনা করতে ব্যস্ত।
ড. ইউনুস সাহেবসহ অনেকে ইতিবাচক চেষ্টা করছেন, কিন্তু সরকারি প্রশাসনের কিছু অংশ এখনও আগের রূপ ধরে রেখেছে। যারা প্রকৃত ত্যাগ করেছে, তাদের বাদ দিয়ে ভুয়া কাহিনি রচনা করা হচ্ছে।
এটা খুবই দুঃখজনক যে, যারা অবৈধ সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন, তারাই এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে। এ যেন প্রকৃত ত্যাগীদের অপমান।
তারেক রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এই ছাত্র আন্দোলন একটি সর্বজনীন সরকারবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তবে কিছু শ্রেণি নিজেদের ফায়দা তুলতে ব্যস্ত।
আমার আহ্বান, যারা ‘জুলাই বিপ্লব’ উদযাপন করছেন- তাদের উচিত প্রকৃত ত্যাগীদের স্বীকৃতি দেওয়া।
আমার মতো ক্ষুদ্র কর্মীরাও অনেকের সাহচর্য পেয়েছি-তারা জীবন বাজি রেখে রাজপথে থেকেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। তাদের অবদান অস্বীকার করা অন্যায়।
এই আন্দোলন ত্যাগ, রক্ত ও বেদনার গল্প। একে নিজের প্রচারের হাতিয়ার বানাবেন না।
আপনারা যদি নিজের বলয় তৈরি করে প্রকৃত ত্যাগীদের বঞ্চিত করতে চান, তবে জাতীয়তাবাদী সৈনিকরা আপনাদের বয়কট করতেও দ্বিধা করবে না। ইনশাআল্লাহ।
মিজানুর রহমান (দয়াল)
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদ