ঢাকাSaturday , 28 June 2025

কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা

সম্পাদকীয়
June 28, 2025 8:56 pm
Link Copied!

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা গত কয়েক দশকে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেলেও এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জে জর্জরিত। স্বাধীনতার পর শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও, সেই অগ্রগতি মূলত পরিমাণগত গুণগত মানের দিক থেকে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন এখনো অধরা। শিক্ষার উদ্দেশ্য শুধু সার্টিফিকেট অর্জন নয়, বরং একটি জাতিকে সচেতন, দক্ষ, এবং নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের বর্তমান শিক্ষা কাঠামো সেই লক্ষ্যে যথেষ্ট কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের ঘাটতি, মানহীন পাঠদান এবং একমুখী পাঠ্যপদ্ধতির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃজনশীলতা ও চিন্তাশক্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার মান ও পদ্ধতির ক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যে যেমন বিশাল ফারাক রয়েছে, তেমনি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও রয়েছে বৈষম্য। এই বৈষম্য একটি শ্রেণিভিত্তিক সমাজ গঠনের আশঙ্কা সৃষ্টি করছে, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।

শিক্ষা খাতে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিক প্রভাব শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করে তুলছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো সংকট, শিক্ষক স্বল্পতা, উপকরণ ঘাটতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতি মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি আমাদের পাঠ্যক্রমও যুগোপযোগী নয়। বর্তমান বিশ্ব যে ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান চায়, আমাদের শিক্ষা সেই বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারছে না। উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে গবেষণার অভাব, স্বচ্ছ নিয়োগব্যবস্থার সংকট এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এই অবস্থার পরিবর্তনে আমাদের অবশ্যই শিক্ষাব্যবস্থার একটি মৌলিক ও সমন্বিত সংস্কার প্রয়োজন। মানসম্পন্ন শিক্ষক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং নিয়োগে স্বচ্ছতা ও মেধার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পাঠ্যক্রমকে যুগোপযোগী ও দক্ষতা-ভিত্তিক করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষার ফলাফলের জন্য নয়, বাস্তব জীবনের জন্যও প্রস্তুত হতে পারে। প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শিক্ষা বিস্তারের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও সমানভাবে উপকৃত হতে পারে।

তদুপরি, শিক্ষাকে রাজনীতি ও দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য শক্তিশালী তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। পাশাপাশি, গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা এবং উদ্ভাবনী চিন্তা বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অধিকতর বিনিয়োগ এবং প্রণোদনা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে শিক্ষাখাতে সাম্য ও অন্তর্ভুক্তির নীতি গ্রহণ জরুরি।

শিক্ষা হলো একটি জাতির উন্নয়নের মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ড যদি দুর্বল থাকে, তবে কোনো উন্নয়নই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। তাই শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন কেবল শিক্ষামন্ত্রকের একক দায়িত্ব নয়; এটি হতে হবে জাতীয় অগ্রাধিকার। রাষ্ট্র, সমাজ ও নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই একটি উন্নত, মানসম্পন্ন ও মানবিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।